It’s written in Bengali. If you wish to read it, please use Google Translate or similar tools.
তারিখ – ০২/০২/২০২০
স্থান – ঢাকা, পৃথিবী।
পশ্চিমের আকাশে সুর্য ডুবে গেছে অনেক আগেই। গোধূলির অল্প একটু যে আলো ছিল, তাও মিলিয়ে যাচ্ছে। হাটা না থামিয়েই চারপাশে তাকিয়ে রিকশা খুঁজলো কাজল। কিন্তু এমনিতেই নির্জন রাস্তাটা এখন পুরোপুরি জনশূন্য।
“ধুৎ!”
বাইরে যতই ড্যাম-কেয়ারভাবে চলুক, বাসায় তাকে কড়া শাসনের মধ্যে রাখা হয়। সুর্য ডোবার আগে বাসায় ঢোকাও তার মাঝে একটা।
এমনিতে ও কলেজ শেষ হওয়ার পর এক ঘন্টা বাস্কেটবল কোর্টে কাটিয়েই বাসায় চলে আসে। কিন্তু আজকে শহরের অন্যপ্রান্তের এক কলেজের সাথে তাদের কলেজের ম্যাচ ছিল। শক্ত প্রতিপক্ষ, কয়েক সপ্তাহ ধরেই ওরা জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। আজকে শেষমুহুর্তে কাজলেরই স্কোর করা পয়েন্টে ওরাই জিতেছে। বিজয়ের আনন্দে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে মারতে সময়ের কথা খেয়ালই ছিলনা তার। এখন সেটারই মাশুল গুনছে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলো কাজল। সাতটা বেজে গেছে, অথচ এখনো প্রায় পনেরো মিনিটের রাস্তা বাকি। লোকে কী ভাববে সেটা নিয়ে আর মাথা না ঘামিয়ে দৌড়ানো শুরু করে দিলো এবার।
বাবার ঝাড়ির চেয়ে মানুষের বিস্ময় হজম করা অনেক ভাল!
কয়েক মিনিট পর গতি কমালো সে, বাসার গেটটা দেখা যাচ্ছে সামনে। এখন আর তাড়াহুড়া না করলেও চলে।
হাঁটতে হাঁটতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেলো কাজল, মনটা একটু খচখচ করছে কেন যেন।
বাসায় গিয়ে বকা খাবে সেজন্য? না।
কিছু ভুলে ফেলে এসেছে কলেজে? না।
বাসায় গেটটা দেখা যাচ্ছে কীভাবে? বুঝতে পেরে সচকিত হয়ে গেলো ও।
সুর্য ডুবে গেছে বহু আগেই, আঁধারও নেমে এসেছিলো। কিন্তু এখন এত আলো কিসের?
আকাশের দিকে চলে গেলো তার চোখ। সাথে সাথে হতবাক হয়ে গেল কাজল।
আকাশে ধবধবে সাদা আলোর বন্যা বয়ে যাচ্ছে। সুর্য, চাঁদ কোনোটাই নেই!
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলো না ও। চোখ কয়েকবার ডললো, আশা করছে খুললেই সন্ধ্যার পরিচিত অন্ধকার দেখবে।
না, এখনো আছে। শুধু তাই নয়, আলোর উজ্জ্বলতা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই তার চোখ ধাঁধিয়ে গেল অত্যুজ্জ্বল দ্যুতিতে।
“কী -” বাক্যটা শেষ করতে পারার আগেই জ্ঞান হারালো কাজল।
সাথে সাথে দ্বিতীয় পৃথিবীতে এলার্ম বেজে উঠলো।
কয়েক শতাব্দি ধরে পৃথিবী এবং দ্বিতীয় পৃথিবীর একই ডাইমেনশনে চলে আসার যে আশংকা করা হচ্ছিলো, তার প্রথম ধাপ মাত্র শুরু হয়েছে।
তারিখ – ঠিক এক সপ্তাহ আগে, ২৬/০১/২০২০
সময় – ১ঃ১০ পি.এম।
স্থান – ম্যাক্সটন, দ্বিতীয় পৃথিবী।
গ্র্যানাইটের বিশাল একটি টেবিলের এক কোনায় মাত্র পাঁচজন বসে আছেন। বিজ্ঞান পরিষদের গোপনীয় এই মিটিংএ থাকার মত পদমর্যাদা শুধুমাত্র এদেরই আছে। থমথমে পরিবেশে তারা ষষ্ঠ ব্যক্তি, বিজ্ঞান পরিষদের মহাপরিচালকের আসার অপেক্ষা করছেন।
একটু পরেই ঘরের এক কোণায় একটি দরজা ফুটে উঠলো, সেখান থেকে বেরোলেন ক্রিয়ন। দ্রুত টেবিলের দিকে এগিয়ে এসে নির্ধারিত চেয়ারে বসলেন তিনি। কোনো ভূমিকা না করেই মিটিং শুরু করে দিলেন।
“আমাদের আল্ট্রাকম্পিউটার, সিট্রনের রিপোর্ট একটু আগেই পেয়েছি, সেটার কপি আপনাদের সবার কাছেই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা এখন নিশ্চিত যে আমাদের বিজ্ঞানীরা যে প্যারালাল ওয়ার্ল্ডগুলোর ক্ল্যাশ হওয়ার আশংকা করছিলেন, তা ফেব্রুয়ারির দুই তারিখেই ঘটবে। সিট্রন বলছে, ২য় ফেব্রুয়ারীতে আমাদের ব্যবহার্য এক বা একাধিক বস্তু দিনের যেকোনো সময়ে পৃথিবীতে চলে যাবে, এবং পৃথিবীর ওই বস্তুগুলো আমাদের এখানে চলে আসবে। ঠিক কী জিনিস যাবে তা আগে থেকে আমরা জানতে পারবো না, কিন্তু আমি নির্দেশ দিয়েছি সবকিছু ট্র্যাকিং এর আওতায় রাখতে; যেন ঘটনাটা ঘটার সাথে সাথে আমরা জানতে পারি এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া শুরু করতে পারি।” অনেকক্ষন কথা বলে দম নেয়ার জন্য থামলেন একটু।
“মহামান্য ক্রিয়ন, প্যারালাল ওয়ার্ল্ডগুলোর মাঝে সংঘর্ষ ঘটলে তা আমাদের কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে, সে সম্পর্কে আমরা কিছু জানতে পেরেছি?” কাঁচা-পাকা চুলের অপেক্ষাকৃত কম বয়স্ক একজন প্রশ্ন করলেন।
ক্রিয়ন তাকিয়ে রইলেন তার দিকে। এই প্রশ্নটার উত্তর সিট্রনের দেয়া রিপোর্টেই জেনেছেন। কিন্তু সে আশংকার সাথে এটাও বলা হয়েছিলো যে এটি সত্যি হবার সম্ভাবনা শতকরা ৮০%। তারপর থেকেই দ্বিধায় আছেন যে বিজ্ঞান পরিষদের বাকিদেরকে জানিয়ে আতংকিত করে দেবেন না নিজের মাঝেই রাখবেন।
“হ্যাঁ।” একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন তিনি, “আমাদের গবেষণাগারে পৃথিবী থেকে নিয়ে আসা কিছু বস্তুর সাথে আমাদেরগুলোর মিল-অমিল পরীক্ষা করা হয়েছে। সবকিছুই হুবহু একই, শুধুমাত্র চার্জ বিপরীত। যেমন, আমাদের পদার্থে প্রোটনের চার্জ সবসময় নেগেটিভ হয়, কিন্তু পৃথিবীর বস্তুতে পজিটিভ। এরকম বিপরীত চার্জ থাকা পদার্থকে বলা হয় এন্টিম্যাটার, যা সাধারন পদার্থকে স্পর্শ করলে দুটোই ধ্বংস হয়ে যাবে।”
“মহামান্য ক্রিয়ন, বাধা দেয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু রাউলের প্রশ্নের সাথে পৃথিবীর পদার্থের ইলেকট্রনিক বিন্যাসের সম্পর্ক কী?” রাউলের পাশের ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন।
“সিট্রন আশংকা করছে, আমরা সংঘর্ষটার ফলে পৃথিবী এবং দ্বিতীয় পৃথিবীর মাঝে যে পদার্থের আদান প্রদান হবে, সেটি যদি ঠেকানো না যায় তাহলে এরপরে যেকোনো মুহুর্তে পৃথিবী এবং দ্বিতীয় পৃথিবী একই মাত্রায় চলে আসবে।”
ক্রিয়ন কথা শেষ করার আগেই তার বক্তব্য বুঝতে পেরে আতংকে শিউরে উঠলেন বাকিরা।
“…এবং, ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার এক হয়ে দুটোই বিলীন হয়ে যাবে।” শেষের দিকে গলা কেঁপে গেলো তার।
অনেকক্ষণ পর রাউল নীরবতা ভঙ্গ করলো, “মহামান্য ক্রিয়ন, এখন আমাদের কী করা উচিত?”
“আমি জানি এই রিপোর্ট প্রকাশ করলে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে যাবে, কিন্তু এটা শুধুমাত্র আমাদের বিজ্ঞান পরিষদের কোনো সমস্যা নয়; পুরো দ্বিতীয় পৃথিবীরই অস্তিত্বগত একটি সমস্যা। তাদের এটি সম্পর্কে জানার অধিকার আছে। তারপরো, আমি আমার সিদ্ধান্ত আপনাদের অপর চাপিয়ে দিতে চাই না। আপনারা সবাই সম্মতি দিলেই এই রিপোর্ট আমি প্রকাশ করবো, নাহলে নয়।”
সিদ্ধান্ত নিতে খুব বেশি সময় নিলেন না কেউ।
“বেশ।”, একটু থেমে বললেন ক্রিয়ন, “সিট্রন, রিপোর্ট প্রকাশের অনুমতি দেয়া হলো।”
পরমুহূর্তে কয়েক হাজার গণমাধ্যমের কাছে রিপোর্টটি চলে গেলো।
বিকালের মাঝেই ম্যাক্সটনের সকল নাগরিক জেনে গেলো।
সময় – ৪ঃ১০ পি.এম
ছিমছাম একটা রুম। একটি বুকশেলফ, একটি টেবিল ও একটি বিছানাছাড়া আর কোনো আসবাব নেই।
প্রতীক বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় বই পড়ছে। তার ডিজিটাল এসিস্টেন্ট, প্রিক্স মৃদুস্বরে ব্রেকিং নিউজ পড়ে শোনাচ্ছে।
পেশায় ও একজন হার্ডওয়্যার ডেভেলপার। বয়স ১৭। শহরের বাইরে একটা ছোট টেকনোলজি কম্পানিতে কাজ করে, যেখানে সে তরুনতম কর্মী। অসম্ভব চুপচাপ স্বভাবের।
এইমুহূর্তে ও বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিক্সের ব্রেকিং নিউজ পড়া শেষ।
আস্তে করে বইটা হাত থেকে রাখলো প্রতীক। কিছুক্ষণ ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকলো। এরপর উঠে বসলো।
“প্রিক্স?’
“বলো।”
“ফেব্রুয়ারীর ২ তারিখে আমার স্কেজিউলে কী কী আছে?”
“অফিসের কিছু কাজ। বিজ্ঞান পরিষদের আয়োজন করা একটি ওয়ার্কশপে যাওয়া। কিন্তু সবই ক্যান্সেল করা হয়েছে।”
“কেন? আমি তো ক্যান্সেল করতে বলিনি।” একটু অবাক হলো।
“বিজ্ঞান পরিষদের নির্দেশে ওইদিন সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। ঘরের বাইরে কেউ বের হতে পারবে না, এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে ভিডিটিউবে যেকোনো মুহূর্তে যোগাযোগ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
“ধুৎ!”
বাসার বাইরে থেকে খুব একটা বের হয়না প্রতীক। তবে বিজ্ঞান পরিষদের ওয়ার্কশপগুলোতে নিয়মিত যায়। এবারেরটার জন্য অনেকদিন ধরেই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলো। তার খুব পছন্দের একটি বিষয়ের ওপর ওয়ার্কশপটি হওয়ার কথা ছিল।
“ট্যাবিকে এক কাপ কফি দিয়ে যেতে বলো।” একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ও।
ট্যাবি বিল্ডিং এর ফুড ডেলিভারি রোবট।
“আচ্ছা।”
আবার শুয়ে পড়লো প্রতীক। বইটা হাতে নিয়ে আগের জায়গা থেকে পড়া শুরু করলো।
“প্যারারেল ওয়ার্ল্ডের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন প্রথম বিজ্ঞানী অ্যান্টেন, তবে তার কথা সে সময়ে অনেকেই মানতে চায়নি। বিশেষ করে বিজ্ঞানী রাউল এর তীব্র বিরোধিতা করে মন্তব্য করেন…“
তার সবচেয়ে পছন্দের অধ্যায় এটা। পাতা উলটে পরের পৃষ্ঠায় গেল সে…